একযুগপর পথভোলা বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের ঘরে ফেরার গল্প

মোঃ সামসুল ইসলাম আমিরুল , ভান্ডারিয়া প্রতিনিধি ঃ সকল কান্না দুঃখের নয়, কিছু কান্না আনন্দের হয়। হয়তো এ কথা সকলে বিশ্বাস করলেও , নিজ চক্ষে না দেখলে অন্যের কাছ থেকে শুনে আনন্দ কান্নার সুখ উপলব্ধি করা অনেকটা কঠিন। গত ৩১ অক্টোবর বৃহাস্পতিবার দুপুরে তেমনি এক আনন্দ কান্নার দৃশ্য ঘটেছে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার তেলিখালী ইউনিয়নের জুনিয়া গ্রামের হারুন সরদারের স্ত্রী (এলাকার মহিলা কবিরাজ) খাদিজা বেগমের বাড়িতে।

পথভুলে  হারিয়ে যাওয়া মনোয়ারা বেগমকে ওই দিন দুপুরে স্বামী , ছেলে মেয়ে , এলাকার ইউপি সদস্য , প্রতিবেশীসহ আশ্রয়দাতা খাদিজা বেগমের বাড়িতে নিতে এলে এক আনন্দঘন পরিবেশের অবতারনা ঘটে। হারানো স্বজনের জন্য সে এক আনন্দ কান্নার মূহুর্ত।

প্রায় এক যুগ পূর্বে হারিয়ে যাওয়া মনোয়ারা বেগমকে নিয়ে সংবাদকর্মী মোঃ সামসুল ইসলাম আমিরুল সহযোগি মোঃ মামুন হোসেনকে সাথে নিয়ে তৈরী করা ” স্বামি সন্তানের কাছে ফিরতে চায় মনোয়ারা বেগম” শিরোনামে প্রকাশীত একটি সংবাদ গত ২৫ অক্টোবর শুক্রবার ” দৈনিক বাংলাদেশের আলো, দৈনিক আজকের বার্তা , দৈনিক নয়াদিন্তের  অনলাইনে এবং অনলাইন কালান্তর২৪.কম সহ একাধীক অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এবং তাকে সনাক্তকরনে গুগলের সহায়তায় নিলে খোঁজ মিলে মনোয়ারা বেগমের পরিবারের। মাথা আগের তুলনায় একটু ভালো, একটু একটু করে ফিরছে স্মৃতি, আবছা আলোর মতো মনে পড়ছে পুরানো স্মৃতি সব। তাইতো এখন স্বামী সন্তানের কাছে ফিরতে চায় মনোয়ারা বেগম।

জানাগেছে, ২০১৫ সালের দিকে ভা-ারিয়া এবং মঠবাড়িয়া উপজেলার মাঝামঝি মুসুল্লি বাড়ি নামক স্থানে ঘোরাঘুরি করছিলেন মনোয়ারা বেগম। ১৯ দিন আগে মা হারানো ভান্ডারিয়া উপজেলার তেলিখালী ইউনিয়নের হারুন সরদারের স্ত্রী (এলাকার মহিলা কবিরাজ) খাদিজা বেগম তাকে দেখতে পেয়ে নিজের কাছে নিয়ে আশ্রায় দেন। পরবর্তীতে খাদিজা বেগম বিভিন্ন মানুষের কাছে শুনতে পান প্রায় ৭/৮ বছর যাবত মনোয়ারা এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করেছেন।

মানষিক ভারসাম্যহীন বুঝতে পেরে আশ্রয়দাতা খাদিজা আশ্রিত মনোয়ারার উপর উপর শুরু  করেন নিজের রপ্ত করা কবিরাজি চিকিৎসা। একটু একটু করে ফিরতে থাকে মনোরার স্মৃতি। মনে পড়তে থাকে স্বামী সন্তানদের কথা। এ প্রতিবেদক জুনিয়া এলাকায় একটি স্কুলের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আশ্রয়দাতা খাদিজা মনোয়ারা বেগমকে নিয়ে ছুটে আসেন , সাংবাদিকরা যদি এ সংবাদটি প্রকাশ করে তাহলে হয়তো মনোয়ারা ফিরে যেতে পারে তার পরিবারের কাছে।
কথা অতোটা স্পষ্ট না বলতে পারলেও এ প্রতিবেদকের সামনে মনোয়ারা বেগম একে একে বলেন, স্বামী মন্নান ড্রাইভার (গাড়িতে মালামাল টানে) বাবার নাম ইয়াদ আলী, ভাই দারোব আলী, শ্বশুর আঃ রশীদ মুন্সি, তিন মেয়ে ২ ছেলে, ছেলেদের নাম আশকার ও সেলিম। মেয়ে ভানু, ছালমা ও শিল্পি। এক জামাইর নাম আনোয়ার বলে তার মনে আছে।

তিনি দাবী করেন তার বাবার বাড়ি ও শ্বশুর বাড়ি একই এলাকায়, এলাকার মেম্বর সিমান তার ভগ্নিপতি। তিনি আরও দাবী করেন তার বাড়ির সামনে জামতলার হাট নামক একটি বাজার আছে। এলাকার পরিচিত লোক কোবার অথবা কবির ডাক্তার। তিনি বলেন ফুলতলা তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাবার পথে একযুগ আগে তিনি হারিয়ে যান।

মনোয়ারা বেগমের আশ্রয়দাতা খাদিজা বেগম বলেছিলেন, খালাকে আমি পাঁচ বছর ধরে লালন পালন করে আসছি , তিনি খুব স্বান্ত স্বভাবের একজন মানুষ। এমি যখন তাকে আমার কাছে  প্রথম নিয়ে আসি তখন তিনি তেমন কিছুই বলতে পারতেননা , আমি বুজতে পারি তিনি মানষিক ভারসাম্যহীন। এর পরে তার উপরে আমি আমার জানা কবিরাজি বিদ্যা প্রয়োগ শুরু করি। আমার ভালো লাগছে যে,এখন তিনি অনেক কিছু মনে করতে পারেন। আমার আরো বেশী ভালো লাগবে , এ সংবাদের মাধ্যমে খালা যদি ফিরে পায় তার পারিবারকে।

সেই আশা থেকে অজোঁপাড়া গায়ের এক গ্রাম্য কবিরাজ  খাদিজা বেগম আবারও প্রমান করতে চাচ্ছেন মানুষ মানুষের জন্যে ,জীবন জীবনের জন্যে। একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারেনা ও বন্ধু।

পথভোলা বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম একযুগ পরে খুঁজে পেয়েছেন তার আপন ঠিকান। আপন ঘরেই কাটবে তার জীবনের শেষ বেলা টুকুন। খাদিজা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, খালা ৫ বছর ছিলো আমার ঘরে। আজ তাকে বিদায় দিতে আমার কষ্ট হচ্ছে। আজ থেকে যেন আমি আবার নতুন করে স্বজন হারা হলাম।

বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমকে নিতে এসে স্বামী আঃ মন্নান জানান, স্ত্রীকে ফিরে পেতে গনমাধ্যম এবং সংবাদকর্মীদের এ সহযোগিতা আমার চির দিন মনে থাকবে।আমি স্ত্রীকে আর হারাতে চাইনা। বড় মেয়ে ভানু কেঁধে কেঁধে বলেন মহান আল্লাহর দয়ায় এক যুগ পরে মাকে নতুন করে ফিরে পেলাম , এ আনন্দ প্রকাশ করার নয়। জুনিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য মোঃ শাহজাহান হাওলাদার দাবী করেন , বৃদ্ধা মনোয়ারা একযুগ পরে আপন নিড়ে ফিরে যাওয়া আবারও প্রমান করে সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের দর্পন।

উল্লেখ্য ঃ গত ২৫ অক্টোবর শুক্রবার ” দৈনিক বাংলাদেশের আলো, দৈনিক আজকের বার্তা , দৈনিক নয়াদিন্তের  অনলাইনে এবং অনলাইন কালান্তর২৪.কম সহ একাধীক অনলাইন পত্রিকায় ” স্বামি সন্তানের কাছে ফিরতে চায় মনোয়ারা বেগম” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচড় ইউনিয়নের পূর্ব উজানচড় গ্রাম থেকে স্বামী , ছেলে মেয়ে , এলাকার ইউপি সদস্য , প্রতিবেশীরা সহ আশ্রয়দাতা খাদিজা বেগমের বাড়িতে এসে বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমকে তার আপন ঠিকানায় নিয়ে যায়।