ভান্ডারিয়ায় ধর্যিতার পরিবার পালিয়ে বেড়াচ্ছে

পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক মাদরাসা ছাত্রীকে গণধর্ষণ ঘটনার মামলায় অভিযুক্ত দুই আসামির মরদেহ উদ্ধারের পর পালিয়ে বেড়াচ্ছে নির্যাতিতার পরিবার। অভিযুক্ত সজল জোমাদ্দারের (৩০) লাশ ২৬ জানুয়ারি ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার বীণাপানি গ্রাম থেকে রাকিব মোল্লার (২০) লাশ ফেব্রুয়ারি রাজাপুরের আঙ্গারিয়া গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ইটভাটার পাশ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযুক্ত দুই আসামির লাশের গলায় ঝোলানো কাগজে লেখা ছিলআমি (অমুকের) ধর্ষক। ইহাই ধর্ষণের পরিণতি। ধর্ষকেরা সাবধান। হারকিউলিস।

কে বা কারা এই দুই অভিযুক্তকে হত্যা করেছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি। নিয়ে নিহতের স্বজনরা বা পুলিশের পক্ষ থেকেও কিছু বলা হচ্ছে না

সরেজমিনে শনিবার দুপুরে নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে এক বৃদ্ধা ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি। ওই বৃদ্ধা নির্যাতিতার নানি বলে জানায় প্রতিবেশীরা। তবে ওই বৃদ্ধা কারো সঙ্গেই কোনো কথা বলছেন না

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার মাদরাসা ছাত্রীর পরিবার তাদের স্বজনরা মামলা প্রাণের ভয়ে ঘটনার পর থেকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। নিরাপত্তার কারণেই তারা বাড়ি ছেড়েছে। গত ২৬ জানুয়ারি কাঁঠালিয়া থেকে অভিযুক্ত আসামি সজলের লাশ উদ্ধার হওয়ার পরই আত্মগোপনে চলে যায় পরিবারটির সদস্যরা

নিহত সজলের পরিবার ছেলে হত্যার দায়ে অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে মামলা দায়ের করেছে। তবে মামলার এজাহারে নির্যাতিতার বাবা, নিহত রাকিব, তার বাবা, ফুপা-ফুপু মাদরাসার এক শিক্ষককে সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের দুই দিন পর ২৮ জানুয়ারি কাঁঠালিয়া থানায় সজলের বাবা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন

এদিকে রাকিবের পরিবারের সন্দেহ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই বিচারবহির্ভূতভাবে রাকিবকে হত্যা করেছে। তবে রাকিবের পরিবার থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি

রাকিবের বাবা কালাম মোল্লা বলেন, ‘রাকিব ঢাকায় আশা ইউনিভার্সিটির এলএলবি পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। নির্বাচনের আগে সে গ্রামের বাড়িতে আসে। ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর ঢাকার সাভারের নবীনগর এলাকায় এক বন্ধুর কাছে আশ্রয় নেয় সে। গত ২৫ জানুয়ারি নবীনগরের গণস্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি চায়ের দোকান থেকে রাকিব তার বন্ধুকে একটি কালো একটি সাদা গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বন্ধুকে ছেড়ে দেওয়া হলেও রাকিব নিখোঁজ ছিল। ঘটনার পরদিন শনিবার আশুলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি।তিনি আরো বলেন, ‘ধর্ষণ মামলার কোনো তদন্ত হয়নি, মেডিক্যাল রিপোর্টও আসেনি। এরই মধ্যে আমার ছেলেকে (আসামি) হত্যা করা হয়েছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।

নিহত সজল জোমাদ্দারের বাবা শাহ আলম জোমাদ্দার বলেন, ‘সজল ঢাকায় বাংলালিংক কম্পানিতে চাকরি করে। শুক্রবার সে বরিশালে আয়কর বিভাগের একটি পদে চাকরির পরীক্ষা দিতে আসে। পরীক্ষা শেষে সে গ্রামের বাড়িতে চলে আসে। কী হয়েছে তা আমার জানা নেই। ওর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয়েছে। পরে শুনি কাঁঠালিয়ায় ছেলের লাশ পাওয়া গেছে। মামলার বাদীপক্ষের লোকজন প্রতিবেশী কয়েকজনকে নিয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি কাঁঠালিয়া থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।

ভাণ্ডারিয়া উপজেলার নদমুলা গ্রামের ইউপি সদস্য শওকত হোসেন বলেন, ‘দুই আসামি খুন এবং নির্যাতিতার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে তারা এলাকাছাড়া।

জানতে চাইলে সহকারী পুলিশ সুপার (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) মোজাম্মেল হোসেন রেজা বলেন, ‘পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করবে পুলিশ।

তথ্য সুত্রঃ কালেরকন্ঠ।