শীতমধু
দেবদাস মজুমদারঃ উপকূলে এখন শীতের কিছুটা আমেজ শুরু হয়ে গেছে। সন্ধ্যায় হালকা কুয়াশা আর হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে শীত আসন্ন।
শীত মৌসুম শুরু তো খেজুরের জোশ রস। উপকূলীয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীতমধু খেজুরের রস আহরণে মৌসুম সমাগত। এ মৌসুমে আবহমান বাংলায় খেজুরের রস আহরণ, খেজুরের গুড় আর নবান্নের উৎসব একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। আর খেজুরের রসের পিঠা-পায়েস বাঙালির খাদ্যতালিকায় এখনও জনপ্রিয়।
বছর জুড়ে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকলেও শীতকালে উপকূলের চাষিদের কাছে খেজুর গাছের কদর বেড়ে যায়। কারণ এই গাছ দিচ্ছে শীত মৌসুম জুড়ে সুমিষ্ট রস। আর এ রস জ্বালিয়ে ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও পাটালি গুড় তৈরি করা হয়। খেজুরের গুড় থেকে একসময় বাদামি চিনিও তৈরি করা হতো। যার স্বাদ ও ঘ্রাণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। খেজুর গাছের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে। শীতের সকালে খেজুরের রস পান শরীর ও মনে প্রশান্তি এনে দেয়। খেজুরের গুড় আবহমান বাংলার সংস্কৃতির অনুষঙ্গ। খেজুরের নলেন গুড় ছাড়া শীত মৌসুমের পিঠা খাওয়া জমে না
উপকূলের কৃষকরা নতুন ধান সংগ্রহের পাশাপাশি খেজুরের রস আহরণের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এখন চলছে খেজুর গাছের ডগা চাঁছার কাজ। এরপর চাঁছা ডগায় বাঁশের তৈরি বিশেষ নল লাগিয়ে রাতভর সংগ্রহ করা হবে ফোঁটায় ফোঁটায় রস। সাধারণত মাটির হাঁড়িতে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। তবে আজকাল প্লাস্টিকের বোতলেও খেজুরের রস আহরণ করে চাষিরা।
শীতের পুরো মৌসুম জুড়ে চলবে রস, গুড়, পিঠা-পুলি-পায়েস খাওয়ার পালা। আর কিছুদিন পর নতুন গুড়ের মিষ্টি গন্ধে ধীরে ধীরে আমোদিত হয়ে উঠবে গ্রামবাংলা।, খেজুর গাছের ডগা চেঁছে বাঁশের খিল লাগানোর কাজ শুরু হবে। অল্পদিনের মথ্যেই রস আহরণ শুরু হবে।
যদিও খেজুর গাছের পরিকল্পিত আবাদ নেই। উপকূলে প্রকৃতিগতভাবে জন্মে টিকে আছে এ গাছ। তবে নির্বিচারে উজাড় হওয়ায় এ গাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে খেজুর গাছের আবাদ করতে পারলে উপাদেয় রস ও গুড় উৎপাদন হবে। যা গ্রামবাংলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্ব বহন করে।
খেজুর গাছ আমাদের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এর পরিকল্পিত আবাদ তেমন নেই। উপরন্তু নির্বিচারে খেজুর গাছ উজাড় করা হচ্ছে, যা পল্লী বাংলার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। খেজুর গাছ থেকে সুমিষ্ট রস, গুড় আহরণে কেবল আমাদের রসনা তৃপ্তির জন্য নয়, আমাদের পরিবেশ ও প্রাণ প্রকৃতির ভারসাম্য সুরক্ষায় খেজুর গাছের আবাদ সম্প্রসারণ জরুরি।